সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০২৪

ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি / রঙ্গনা পাল /পর্ব-৪০



ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি/ রঙ্গনা পাল / পর্ব-৪০


        অতীত হোক বা বর্তমান নারী চিরকাল পুরুষের ভালোবাসায় বশ। হ্যাঁ কেউ কেউ কখনও কখনও ছলনা করে কিন্তু সেই ছলনার নেপথ্যেও থাকে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা। আর যারা ভালোবাসার কাঙাল, আমরণ ভালোবাসার জন্য তাদের কাঙালিপনা চলতেই থাকে। নিরাশার মাঝেও তারা আশার আলো জ্বালিয়ে রাখে। রাজন্যা তার স্বামীর শত অপরাধ ক্ষমা করে এগিয়ে আসে ঝড়ের বেগে। মোটামুটি জেনে ফেলেছে, স্বাধীনের কিছু একটা হয়েছে বা সে সুইসাইড করার প্রবণতা নিয়ে রাজন্যার ফ্ল্যাটে এসেছে। তবে এটাও নিশ্চিতভাবে ধরে নিচ্ছে তার অনুপস্থিতির কথা জেনেই স্বাধীন এখানে এসেছে। নাহ্ রাগ নয় এখন অনুকম্পা হচ্ছে। যাক্ জলদি একটা ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু কী করবে? মাথায় আসছে না। অপরপার্শ্বের বখাটে ছেলে ঝন্টু এগিয়ে এসে বললো- 

           -দিদি, আপনি বললে আমি অধীরদাদুর ছাদ থেকে লাফিয়ে আপনার ছাদে উঠতে পারি । ছাদের দরজাটা খোলা দেখেছি।

             -হ্যাঁ, তাই করো ভাই। তবে যা করবে খুব জলদি করো।

  ঝন্টু কাজে লেগে পড়লো। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ছাদ হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে সদর দরজা খুলে দিল। রাজন্যা দেরি না করে ভেতরে ঢুকে দেখে স্বাধীন একদিকে চিৎ হয়ে পড়ে আছে। শরীরটা নিথর হয়ে আসছে, হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। মুখ বিবর্ণ বিকৃত হয়ে গেছে। পালস্ চেক করে দেখে ধড়ে প্রাণ আছে, সবটা শেষ হয়ে যায়নি।


              এই ফ্ল্যাটেই একজন অটোচালক দাদা আছেন, যার অটোতে রাজন্যা মাঝেমধ্যে ওদিক ওদিক যায়, তাকে ফোনে ডেকে সবাই মিলে ধরাধরি করে অটোতে তুলে নিয়ে স্বাধীনকে মাধবপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। এই হাসপাতালের স্টাফ বলে খুব তাড়াতাড়ি ট্রিটমেন্ট শুরু হয়। স্বাধীনকে ডঃ শুভঙ্কর হালদারের আন্ডারে ভর্তি করানো হয়‌। প্রাথমিকভাবে সেলাইন চালু করা এবং  ডেকাড্রন ডেরিফাইলিন ইনজেকশন পুশ করা হয় তৎপরতার সাথে। ডাক্তারবাবু আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন কিন্তু বেশ খানিকটা দেরি হয়েছে ট্রিটমেন্ট চালু করতে। রাজন্যাকে ডেকে বললেন "এক্ষুনি আই সি সি ইউ-তে ট্রান্সফার করতে হবে।" স্টাফরা পরামর্শ দিল যেহেতু স্বাধীন সুইসাইড করতে চেয়েছে তাই শ্বশুরবাড়িতে যেন খবর দেওয়া হয়। স্টাফেদের পরামর্শমতো রাজন্যা শ্বশুরবাড়িতে খবর দেবার পর দক্ষযজ্ঞ বেঁধে গেল। দেবররেরা আর শাশুড়ি সাথেসাথেই মিলিতভাবে থানায় হাজির। ডঃ শুভঙ্কর হালদার অমায়িক মানুষ। প্রতিটি স্টাফকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। রাজন্যার মানসিক অবস্থা দেখে মাধবপুর থানায় একটা ডায়েরি করে রেখেছেন তার বন্ধু ওই থানার ও.সি. সুগত দস্তিদারকে দিয়ে। ডায়েরিটি রাজন্যার পক্ষে। "রাজন্যার অবর্তমানে তার ফ্ল্যাটে এসে বহুদিন নিখোঁজ স্বামীর আত্মহত্যা করার প্রচেষ্টা"। এক ফাঁকে পুলিশ কর্মচারী তাকে দিয়ে সই করিয়ে নিয়ে গেছে। রাজন্যা এতটাও জানতো না, তবে এটা জানে  পুলিশের হ্যাপা তাকে পোহাতেই হবে। হয়তো সেই কারণেই পুলিশ থানা থেকে রাজন্যার শাশুড়ি সহ দেবরদের বলা হলো- "ছেলে মরতে বসেছে তার খোঁজ না করে বৌমার নামে কেস ফাইল করতে এসেছেন? আগে ছেলেকে বাঁচান তারপর আসবেন"

             

         মথুরাপুরে আই সি সি ইউ. না থাকায় রাজন্যা চিন্তায় পড়ে যায়। স্টাফরা আবারও প্রাইভেট হাসপাতাল আমরিতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিল। সারাদিন পেরিয়ে মাঝরাত্তিরে এসেও , স্বাধীনের এতটুকু উন্নতি নেই। কাজেই ভোর হতে না হতেই এই হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স ড্রাইভার যদুনাথকে নিয়ে তখন বেঁচে থাকা মাইনের দশহাজারকে সম্বল করে সাথে অনুনয় বিনয় করে মেজদেবরকে নিয়ে আমরির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। খবর পেয়ে রেণুকা ভাগ্যিস ফিরে এসেছিল তাই রাজর্ষিকে নিশ্চিন্তে রেণুকার কাছে রেখে স্বাধীনের চিকিৎসার জন্য দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিতে  পেরেছে। একদিকে সেলাইন সহ স্বাধীনকে সামলানো, অন্যদিকে যদুনাথের মরণ-বাঁচন গাড়ি চালানো দুইয়ে মিলে রাজন্যার পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। মাঝরাস্তায় রাজন্যা  বোনের বরকেও সাথে পেল। ভরসা বাড়ল কিছুটা। গাড়ি চালানোর বেগ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হঠাৎ করে ডায়মন্ডহারবারের কাছে এসে একটা কাককে অ্যাম্বুল্যান্সে ধাক্কা খেয়ে সটান মরে যেতে দেখল রাজন্যা। এ এক বীভৎস দৃশ্য! মুহূর্তে রাজন্যার পালস্ রেট বেড়ে গেল। ভয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। একমাত্র গুরুদেব আর ঈশ্বরের নাম করে কিছুটা ধাতস্থ হলো। এরমাঝে কোনরকমে ঢাকুরিয়া আমরিতে পৌঁছতেই ধড়ে প্রাণ এলো। এখানে পৌঁছনো মাত্র স্বাধীনকে ট্রলিতে শোয়ানো হলো, ক্ষণিকের মধ্য তিন-চারজন ডাক্তার এসে স্বাধীনের বুকের কাছে হাত দিয়ে ওদের সিস্টেমে নানাভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখে কোনো সেন্স নেই, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম , ঠোঁট কালচে হয়ে গেছে। সেই মুহূর্তে রাজন্যা শুধু বলতে পেরেছে-"আমি নার্সিং স্টাফ, এ আমার হাজব্যান্ড। কী খেয়েছে বলতে পারবো না তবে পেসেন্টকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য আই  সি সি ইউ-তে নিয়ে আপনাদের মত ট্রিটমেন্ট শুরু করুন, টাকাপয়সার জন্য কিছু আটকাবে না"


           -এরপর আগামী সপ্তাহে......

শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০

স্মৃতিপটে আমার শিক্ষক শ্রদ্ধেয় ঈশ্বর জ্যোতিভূষণ চাকী - সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়


স্মৃতিপটে আমার স্যার শ্রদ্ধেয় ঈশ্বর জ্যোতিভূষণ চাকী 

- সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়

 

আমার প্রিয় শিক্ষক নিয়ে লিখতে গেলে সত্যি মনে একটা গর্ব বোধ হয় বলার অপেক্ষা রাখে না। আমার ইস্কুল জীবনের সূচনা হয়েছিল আমাদের মুখার্জি পরিবারের জ্যেঠু, বাবা কাকাদের পারিবারিক ট্র্যাডিশন অনুযায়ী দক্ষিণ কলকাতার তৎকালীন সুপ্রসিদ্ধ বালিগঞ্জ জগদ্বন্ধু ইনস্টিটিউশনে। আজ এ কথা বলতেই হয়, অবাক লাগে যখন স্মৃতি রোমন্থনে মনে পড়ে যায় ইস্কুল জীবনের সেই সময়ের কথা ! আমি যেসব স্বনামধন্য শিক্ষকদের ছত্রছায়ায় বড় হয়ে উঠেছিলাম। তাদের কৃষ্টির সাথে নতুন করে পরিচয় করানো আমার নিতান্তই ধৃষ্টতা হবে বলে আমি মনে করি। তবে আমার প্রিয় শিক্ষকদের নিয়ে কিছু লিখতে গেলে সেটি স্বল্প পরিসরে সব লেখা সম্ভব নয়। অনেকের কথা স্বাভাবিক ভাবে আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে। তবে ওনাদের মধ্যে যে সম্পর্কটি শুধু ছাত্র ও শিক্ষক সম্পর্ক হয়ে থেমে থাকে নি, যে সম্পর্ক অনেকটা হৃদয়ের গভীরতর অনুভব ও আবেগ নিয়ে আমার মনকে আজও মাঝে মধ্যেই ছুঁয়ে যায়, তিনি হলেন আমাদের ইস্কুলের গৌরব আমার দেখা এক উচ্চ ভাবাদর্শের মানব, আমার শৈশব এবং কৈশোরের সাহিত্য চর্চার প্রেরণার স্রোত, আমার আদর্শ শিক্ষক শ্রদ্ধেয় ঈশ্বর জ্যোতিভুষন চাকী।

 

উনি ছিলেন আমাদের ইস্কুলের প্রবীণ শিক্ষক সবসময় এক অতি বিনয়ী, মিষ্ট ভাষ্য, স্নেহশীল ব্যক্তিত্ব। ইস্কুলের সবার সামনে স্যার বললেও বাড়ি ফিরে এসে বলতাম জ্যেঠুন। আসলে আমার বাল্যবন্ধু  ইস্কুলের সহপাঠী পথিক চাকীর সাথে ওর বাড়িতে খেলতে গেলেই ছেলেবেলা থেকেই স্যারকে ডাকতাম জ্যেঠুন বলে। আর আমার বাবা মা পরিবারের সকলের সাথে সম্পর্কটা ছিল গভীর হৃদ্যতার। উনি থাকতেন আমাদের সাথে একই বাড়িতে ঠিক আমাদের ওপর তলায়, ওটা ছিল আমার মামাবাড়ির তিনতলা। বাড়িটির ঠিকানা ৮১ কাঁকুলিয়া রোড এলাকায় এখনো মুখার্জি বাড়িনামে পরিচিতজ্যেঠুনের পরিবারের সবাই ছিলেন সাহিত্য ও সংস্কৃতি মনস্ক প্রেমী যৌথ পরিবার আর তাদের পাশে থেকে আমার ছেলেবেলায় বড় হওয়া। তিনতলার পশ্চিম দিকের চওড়া বারান্দায় মস্ত কাঠের টেবিল সামনের দুপাশে হাতল দেওয়া কাঠের চেয়ার আর চারিপাশে আমাদের সিনিয়র ছাত্র দাদাদের ভিড়, উনি ওনার দুই চোখ বন্ধ করে দিয়ে চলেছেন ওনার অগাধ পান্ডিত্যের যৎসামান্য প্রসাদ আর দাদারা তাদের খাতায় নোটস টুকে নিচ্ছে এটাই ছিল আমাদের কাছে খুব পরিচিত দৈনন্দিন চিত্র। স্যার আমাদের পড়াতেন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস। উনি ছিলেন ভাষাবিদ অনুবাদক এবং  একাধিক ভারতীয় ভাষা জানতেন প্রায় ১৮টি যেমন পাঞ্জাবি, ওড়িয়া, নেপালি, হিন্দি, আরবি, ফার্সির সঙ্গে উর্দু আর স্প্যানিশ, ফরাসি, জার্মান, এসপেরান্তো ইত্যাদি অনেক ভাষা। উর্দু-আরবি প্রচুর কাজ করতে ওনাকে দেখতাম তবে সেই সময় আমাদের মাথার ঢুকত না আমরা পড়তে গিয়ে দেখেছি ভাষা নিয়ে কাজ করছেন এমন কত গুণীজনের তার কাছে আগমন। আমি মোহিত হয়ে যেতাম স্যারের অসাধারণ স্মৃতিশক্তি দেখে,  আমাদের স্কুলে এমন একজন শিক্ষক আছেন যিনি কেবল বাংলা ভাষার শিক্ষক নয়, যখন প্রয়োজন উনি সংস্কৃত পড়িয়েছেন পঞ্চম এবং ষষ্ঠ শ্রেণীতে মনে পড়ে নিয়মিত হিন্দি শিক্ষকের অনুপস্থিত থাকলে, ক্লাস কেন বন্ধ হবে তাই স্যার হিন্দি পড়িয়েছেন, এমনটি ছিলেন আমাদের বহুভাষাবিদ শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ঈশ্বর জ্যোতিভূষণ চাকী।

 তারই অগাধ পাণ্ডিত্য জোয়ারে উনি ভাসিয়েছেন তৎকালীন ছাত্র সমাজকে তার হাতে তৈরি করেছেন অসংখ্য ছাত্র যারা আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। আমাদের ইস্কুলের লগর নিচে লেখা আত্মা নং বি দ্ধিঅর্থাৎ নিজেকে চেনো বা জানো, নিজের স্বরূপ অবগত হও এই ভাবনাটিতে স্যারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমার আজও মনে পড়ে স্যার আমাদের স্কুলে শুধু পড়াশোনা নয়, আমাদের দিয়ে করাতেন নানা ধরনের নাটক, ওয়াল ম্যাগাজিন। আমরা স্কুলে ওয়াল ম্যাগাজিন শুরু করি। এরপর  আমার বাল্যবন্ধু পথিক আমি নিয়মিত ওয়াল ম্যাগাজিন প্রকাশ আর নাটক মঞ্চস্থ  করতাম স্যারের বাড়িতে। সেখানে ওনার লেখাও থাকতো। আমরা শুনেছিলাম উনার সাথে জাদুকর পিসি সরকারের সখ্যতার গল্পশুনেছি স্যার আমাদের স্কুলে যোগদান করেছিলেন স্কুল প্রেসিডেন্ট রমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় পুত্র) ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হিরণময় বন্দোপাধ্যায়ের কাছে ইন্টারভিউ দিয়ে। কলকাতায় স্যারের সাথে পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ হয়ে ছিলেন সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের বহু কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব বিষ্ণু দে, শম্ভু মিত্র, জর্জ বিশ্বাস, বুদ্ধদেব বসু, অজিত দত্ত ,আবু সয়ীদ আইয়ুব। ছোটদের জন্য উনি একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন সাংস্কৃতিক যার নাম ছিল কল্লোলদাদুর কাছে শুনেছিলাম ওনার সাথে অল ইন্ডিয়া রেডিও যোগাযোগ হয়েছিল উনিশো ষাট সালের শুরুতে এবং সেখানে ছোটদের নিয়ে নানা রকম অনুষ্ঠান করেছিলেন অনেকদিন। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে তাঁর বহু শিক্ষামূলক কথিকা-গল্প-সংগীতালেখ্য ও নাটক প্রচারিত হয়েছে। আমার কৈশোর অবস্থায় কলকাতা দূরদর্শন কেন্দ্রের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন দীর্ঘকাল। তাঁর রচিত শিক্ষা ও সংস্কৃতিমূলক অনুষ্ঠান ও তথ্যচিত্র নিয়মিত প্রচারিত হয়েছে।

 

আমার মায়ের পিসেমশাই পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় সাথে স্যারের সম্পর্ক ছিল এক অতি নিবিড় সম্পর্ক, যার ফলে পদাতিক কবির সুপারিশে আমাদের এই মামার বাড়িতে স্যার ভাড়া পেয়েছিলেন কিন্তু ক্রমশ আমাদের সম্পর্কটা হয়ে গিয়েছিল পারিবারিক। কলকাতা দূরদর্শনের শিক্ষা ও সংস্কৃতির মূল অনুষ্ঠানের সাথে দীর্ঘকাল উনি যুক্ত ছিলেন এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ও জাতীয় সংহতি শিবির পরিকল্পনায় উনি পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিত্ব করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি সাহিত্যে নানা পুরস্কার পেয়েছিলেন সমতট সম্মান (১৯৮৬), ভারত ভাষাভূষণ (১৯৯৬), বিদ্যাসাগর পুরস্কার (২০০৩), প্রমথনাথ বিশী স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯৮), সাম্মানিক ডি.লিট (২০০৬, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়), অনুবাদ পুরস্কার (২০০৬, সাহিত্য অকাদেমি)।

 স্যারকে আমরা সব সময় দেখেছি একটা কাপড়ের ব্যাগ পাঞ্জাবি অতিসাধারণ ধুতি এক অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেউনি শুধু সারাজীবন ছাত্রদের পড়িয়ে গেছেন তা নয়, নানান কথায় উনি ছাত্রদের দিতেন মানসিক এবং চারিত্রিক দৃঢ়তা বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সম্বন্ধে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মহাপ্রণয়ের পরে স্যার সেই স্থান নিয়েছিলেন সেই কথা অনেকেই অকপটে স্বীকার করেছিলেন সত্যি কথা বলতে কবিতা, লেখালিখি, ছবি আঁকা, আবৃত্তি করা বা নাটকে অভিনয় করা এইসব আমাদের শ্রদ্ধেয় স্যারের অনুপ্রেরণায় ফল। আমরা তার অনুপ্রেরণাতেই স্কুল ম্যাগাজিনের জন্য গল্প বা কবিতা লেখা শুরু করছিলাম এগুলো আমাদের মধ্যে তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। ছাত্র জীবনে দেখেছিলাম স্যার জ্যোতিভূষণ চাকীকে যিনি ভাষা ও সাহিত্য সাধনায় মগ্ন ছিলেন আমাদের সকলেকের অভিবাবক হয়ে তার গুরুবাক্য এবং হিত উপদেশ দিতেন। সাহিত্য সাধক হিসাবে স্যারকে বৃহত্তর সারস্বত সমাজ চিনতেন তবে সংগীতমুখর, সঙ্গীত অনুরাগ, সংগীতমুগ্ধ স্যারের দর্শন খুব কাছ থেকে আমারা পেয়েছিলাম আমাদের ইস্কুলের জন্য একটি ওনার লেখা গানের রিহার্সালে।

স্যারের ভাষা সাহিত্যের উপর অগাধ পাণ্ডিত্য ও তার রচিত ভাষা সাহিত্য ও অনুবাদ সৃষ্টির কিছু কথা না বললেই নয় নিম্নে সেগুলো সংগ্রহ করে দিলাম।

 

জ্যোতিভূষণ চাকী : গ্রন্থপঞ্জি

https://www.boibazar.com/author-books/Jotivushon-Chaki

http://www.amarboi.com/2015/07/bangla-bhasar-byakaran-by-jyotibhusan-chaki.html

ঢ্যাম কুড়্ কুড়, সুমুদ্রণ (অমিয়ভূষণ চক্রবর্তীর সঙ্গে), কবিতা।

মরসুমী, চিনকো, ১৯৬০, সাহিত্য সংকলন।

পায়ে পায়ে এতদূর, চিনকো, ১৯৬০, সাধারণজ্ঞান।

নতুন পাতা, চিনকো, ১৯৬১, সাহিত্য সংকলন।

পার্বণী, চিনকো, ১৯৬২, সাহিত্য সংকলন।

ছড়া পিদ্দিম জ্বলে, বুক স্ট্যান্ড, ১৯৬৯।

আমার ছবি তোমার ছড়া, বুক স্ট্যান্ড, ১৯৭৩, সম্পাদিত।

ছোটদের নাট্যসম্ভার, প্রথম খন্ড, সমবায় প্রকাশনী, ১৯৭৯ (সমীর চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পাদনা)।

গোস্বামী তুলসীদাস-বিরচিত রামচরিতমানস ও দোঁহাবলী। সম্পাদনা ও ভাষান্তর, তিন খন্ড। নবপত্র প্রকাশন, ১৯৮০।

সোনাঝুরি, নিওপ্রিন্ট, ১৯৮৩ (চতুর্থ মুদ্রণ), ছড়া।

প্রেম, শ্রুতি প্রকাশনী, ১৯৮৬, অনুবাদ।

চাণক্য চিন্তামণি, নবোদয় প্রকাশন, ১৯৮৮, অনুবাদ।

শব্দ যখন গল্প বলে, বেস্ট বুকস, ১৯৯১, ভাষা।

দুই বাংলার ছেলেভুলোনো ছড়া, মডেল পাবলিশিং হাউস, ১৯৯২।

কৃষণচন্দরর, জীলানি বানু, সাহিত্য অকাদেমি, ১৯৯৪, অনুবাদ।

বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, আনন্দবাজার পত্রিকা ব্যবহারবিধি। আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, ১৯৯৬।

ছড়ার আঙিনায়, উদ্ভাস, ২০০১, ছড়া ও গদ্যের সংকলন।

বাগর্থ কৌতুকী, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, ২০০২, ভাষা, শব্দ।

শুদ্ধ লেখো ভালো লেখো, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রা. লি., ২০০২।

সেরা রূপকথার গল্প, সরোজ পাবলিকেশন্স, ২০০৩, সম্পাদিত।

গালিব : নির্বাচিত কবিতা, সাহিত্য অকাদেমি, ২০০৪ (শঙখ ঘোষের সঙ্গে) সম্পাদিত।

কৈফি আজমির কবিতা, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, ২০০৪, অনুবাদ।

আচার ব্যবহার, জীবনের সাফল্যের সোপান, বেস্ট বুক্স, ২০০৪, সমাজবিধি।

নাট্যে কথামৃত, দেব সাহিত্য কুটীর প্রাইভেট লিমিটেড, ২০০৪।

হল্লা-হাসি-মজা, সরোজ পাবলিকেশন্স, ২০০৪, প্রবীর জানার সঙ্গে সম্পাদিত।

আকাশভরা পাখি, বলরাজ কোমল, সাহিত্য অকাদেমি, ২০০৬, অনুবাদ।

দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, ২০০৬, জীবনী।

প্রাচীন ভারতে পরিবেশচেতনা, অসীমা প্রকাশনী, ২০০৬, পরিবেশ।

টগবগিয়ে নতুন দেশে, দোয়েল, ২০০৬, রূপকথা।

এক ঝাঁক গল্প/ আরবি, ফার্সি ও সংস্কৃত, চিরায়ত কাহিনী, সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা, ২০০৮, অনুবাদ।

টুকরো গল্পের বৈঠক, একবিংশ, ২০০৬, গল্প।

একটি কিশোরের স্বপণ, বি.বি. কুন্ডু গ্র্যান্ডসন্স, ২০০৬, জীবনী।

কোন্ ঠাকুর অবিন ঠাকুর, নিউ বেঙ্গল প্রেস প্রাইভেট লিমিটেড, ২০০৬, জীবনী।

খাপ খোলা তলোয়ার, ওরিয়েন্টাল বুক কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, ২০০৬, জীবনী।

বই তো পড়, টই পড় কি?, পুনশ্চ।?, ইতিহাস।

শিশু-কিশোর রচনাসংগ্রহ ১, , পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি। ২০১০, ২০১১।

অজস্র পত্রপত্রিকায় ছড়িয়ে আছে জ্যোতিভূষণ চাকী-রচিত (এখনো অসংকলিত) প্রবন্ধ-গ্রন্থসমালোচনা। এখানে তারই নির্বাচিত উল্লেখ।দেশ

গালিব : জীবন ও কাব্য, ২৯ নভেম্বর ১৯৯৭।

অন্তরতম সু-চেতনার শব্দ, ২৬ ডিসেম্বর ১৯৯৮।

লেখক যখন পাঠক, ১৮ জুন ২০০২।

সংস্কৃত সাহিত্য ও রতিরাগ প্রসঙ্গে, ২০ মার্চ ১৯৯৯।

আমাদের প্রত্যাশা কতটা পূর্ণ করে রবীন্দ্রনাথের গদ্য, ১ মে ১৯৯৯।

প্রাচীন সাহিত্যে সূর্যগ্রহণের ছায়া, ৭ আগস্ট ১৯৯৯।দিশা সাহিত্য

যে মাটিতে শিউরে ওঠে ঘাস, জানুয়ারি ১৯৯৯।

ভুবনডাঙ্গার মাঠে, জুলাই ১৯৯৯।

মন চলো যাই ভ্রমণে, সেপ্টেম্বর ১৯৯৯।

বেদমন্ত্রে বৃষ্টিপ্রার্থনা, আগস্ট ২০০১।

মাতৃ-উপাসনার উৎস সন্ধানে, শারদীয় ১৪০৭ (২০০০)।

শিবদুর্গার অর্ধনারীশ্বর মূর্তি, উৎসব সংখ্যা, ১৪০৮ (২০০১)।

নৌকা-বাইচ, শারদীয় ১৪১০ (২০০৩)। অভিধান : নানা অঙ্গনে, কোরক। মে-আগস্ট ২০০১।

কবির ও কবীন্দ্রের দুটি গীতাঞ্জলি, গণশক্তি, শারদ সংখ্যা ২০০৭।

আনো অমৃতবাণী, পশ্চিমবঙ্গ, রবীন্দ্রসংখ্যা, ২০০২।

ণত্ব-ষত্বের আঙিনায়, শব্দবার্তা, অক্টোবর ১৯৯৮। লিটিল ম্যাগাজিন:উৎস ও প্রসঙ্গ, সাহিত্য কহন, জানুয়ারি ১৯৯৫।

নটরাজ মূর্তি, নবকল্লোল, কার্তিক, ১৪০৫।

বিষ ও অমৃত, ফিরে দেখা, জুন ২০০০।

শব্দের আঙিনায় ছোটোদের দোসর, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, কথা ও সাহিত্য। সম্পাদনা শঙ্খ ঘোষ, সৌরীন ভট্টাচার্য, অমিয় দেব, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রণব বিশ্বাস। ১৯৯৮।

’-রঙ্গ। ইতিহাস সাহিত্য সংস্কৃতি। অধ্যাপক ব্রতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্বর্ধনা গ্রন্থ, সম্পাদনা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সত্যসৌরভ জানা, প্রগ্রেসিভ পাবলিশার্স, ২০০৮।

বৌদ্ধ মিশ্রসংস্কৃত (বিদ্যাবদান অবলম্বনে)। ভারত ও ভারততত্ত্ব/অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ। অধ্যাপক সুকুমারী ভট্টাচার্য সম্মাননা গ্রন্থ। ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড, ২০০৪।গ্রন্থ সমালোচনা

কবির অভীষ্ট, দেশ, ২৫ জানুয়ারি ১৯৯৭।

পদ্মের মাধুর্য হৃদয়ের স্পর্শ, দেশ, ২ অক্টোবর ২০০৭।

স-য়ে সমকালীন, দেশ, ১৭ মার্চ ২০০৬।

অনেক কথা অল্প কথার ইন্দ্রজালে, দেশ, ২ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ।

অনন্য প্রজাতির বই, বইয়ের দেশ, জানুয়ারি, ২০০৫।

যন্ত্রে যখন কথার ফুল ফোটে, বইয়ের দেশ, জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০০৬।

স্ল্যাংগুয়েজ, বইয়ের দেশ, এপ্রিল-জুন ২০০৬।

অদ্বিতীয় ছড়ার মেলা, বইয়ের দেশ, অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০০৭।

বেদের ভাষ্য বেদের ছন্দ, বাংলা বই, এপ্রিল ২০০১।

বাংলা শব্দের একটি উৎস, বাংলা বই, ফেব্রুয়ারি ২০০৪।

গীতবিতানের জগৎ, বাংলা বই, ফেব্রুয়ারি ২০০৫।

উচ্চজাতের বই, তবে জাতি নির্ণয় সুকঠিন, দিশা সাহিত্য, এপ্রিল ২০০১।

১. কবির অভিপ্রায়, শঙ্খ ঘোষ।

২. প্রবন্ধ সংগ্রহ, রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্ত।

৩. সমকালীন : নির্বাচিত প্রবন্ধ সংকলন, দ্বিতীয় খন্ড, আনন্দগোপাল সেনগুপ্ত।

৪. গালিবের গজল থেকে, আবু সয়ীদ আইয়ুব।

৫. অলীক সংলাপ, রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্ত।

৬. উনিশ শতকে ঢাকার মুদ্রণ ও প্রকাশনা (১৮৪৮-১৯০০), মুনতাসীর মামুন।

৭. বাংলা স্ল্যাং : সমীক্ষা ও অভিধান, অভ্র বসু।

৮. ছড়াসমগ্র ১, , নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।

৯. বেদের ভাষা ও ছন্দ, গৌরী ধর্মপাল।

১০. মিশর থেকে আসা বাংলা শব্দ, ড. লীনি শ্রীনিবাসন।

১১. গীতবিতানের জগৎ, সুভাষ চৌধুরী।

১২. সাপলুডো অথবা ঘরবাড়ি, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। 

  





সাম্প্রতিক লেখা কবিতা

ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি / রঙ্গনা পাল /পর্ব-৪০

ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি/ রঙ্গনা পাল / পর্ব-৪০         অতীত হোক বা বর্তমান নারী চিরকাল পুরুষের ভালোবাসায় বশ। হ্যাঁ কেউ কেউ কখনও কখনও ছলনা করে ...

Shares
FacebookXPinterestEmailSumoMe