মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০২০

কারচুপি -সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়














কারচুপি
সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়



অনেকদিন দেখছি লেখকের কলম,
দেখে প্রচুর লোভ হয় !
হাতে তার ঝকঝকে কলম চমকায়,
ওটা দিয়ে জম্পেশ সব লেখা বের হয় ।
আমার কেবল নজর আটকায়,                                                    
বিশেষ করে ওই কলমের লেখাটায়।
যদিও জানি লেখাগুলো লেখকের সন্তান তুল্য, 
তার নিজস্ব ভাবনায়।
তবু পাশের বাড়িতে রোজ চোখ যায়,
ভাঙাচোরা কলম নিয়ে মনের জানালা দিয়ে দেখি অন্ধকার।
তার সন্তানগুলো খেলছে তার খাতার পাতায় পাতায়,
আমিও খালি সুযোগের অপেক্ষায় থাকি ।

এরপর কোন একটা নিঝুম রাত,
মস্তিস্কে কারচুপির যেই করলো আঘাত ;
নিজের কলম খাপে পুড়ে সিঁধ কেটে
লেখকের বাড়িতে ঢুকে দিলাম এক কোপ সপাটে।

সঙ্গে সঙ্গে তার একটি সন্তানের মৃত্যু!

লেখকের কলমের লেখা আমার নাম এখন পেয়েছে  
কিন্তু ছাপার পর সবাই সাক্ষী দিচ্ছে সেটা অবৈধ 
আমি পারছি না পালাতে ......ঘটেছে আমার কলমের মৃত্যু
বুঝলাম না......এই কলঙ্ক যে থেকে যাবে আমৃত্যু ।

সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০২০

ও তো কৃষ্ণকলি মহাতো নয়... তবে ? -সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়
















ও তো কৃষ্ণকলি মহাতো নয়... তবে ?
          -সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়

আমি হতে চাইনি
এক লাফে মন্দিরের উচ্চতায় উঠে যেতে।
আমিও এতদিনে হয়েছি সংক্রমিত নেপথ্যে  
তাইতো লোলুপ ভাবনায় ইচ্ছে জেগেছিল তোমার সব অজানাকে জানতে
খ্যাতির চুড়োয় বসে নকল প্রেমিক হতে।

তবু জানতাম, না এটাই আমার স্বভাব, 
চরিত্র নিয়ে আঁকিবুঁকি খেলা আমার তো পেশা আর নেশা।
খেলতে খেলতে বুঝি নি, আবার
কৃষ্ণকলি মহাতো কখন হবে সত্য!
আমি জানতাম এমনটাও হয় ।

শুধু ওরা জানতো না অক্ষর স্রমিকের কলমের সাথে
পরিযায়ী ঘর লাগে, সঙ্গী লাগে ।

 এগুলোই বুঝতে চাইছিলাম
খবরের কাগজের পাতায় পাতায়
টিভির খবর দেখে সময় সময়
সব শুনলাম...

তারপর মনে পড়লো
পাশের বাড়ির ছেলেটাকে পুলিশ নিয়ে গিয়েছিল
সে নাকি পড়তে আসা মেয়েটাকে নষ্ট করতে গিয়েছিল।
মনে হল ও তো কৃষ্ণকলি মহাতো নয়... তবে ?

রবিবার, ২৬ জুলাই, ২০২০

মহাকাশ যাত্রা-সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়














মহাকাশ যাত্রা
-সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়


আচমকা শিক দিয়ে টানা মৃতদেহটি,
আমাকে বলে গেল...
আমি যেন লজ্জায় মুখ না ঢাকি !
ওরা কয়েকজন অজান্তেই মৃত্যুর পরে হয়েছে নিরাশ্রয়ে,
ধুলোমাখা মুখগুলোয় শুধুই কান্না হতাশা নিয়ে আছে শুয়ে!


যাদের টেনেহিঁচড়ে তোলা হল অজান্তে,
জানলো না ভর্তি হচ্ছে পৃথিবীর যত ক্ষোভ নিরাশা ।

অসুস্থ এই পৃথিবীতে জীবন এখন বিবর্ণ হয়ে,
কিছু খসে পড়া পাতা !
মানুষের পায়ে তলায় কাদায় ভরা পঙ্কিল তঞ্চকতা ।


হারাচ্ছে ক্রমশঃ জন্ম মৃত্যুর অধিকার,
গড়ে ওঠলো সব স্বপ্নগুলোর মৃত্যু উপত্যকা ।
অপেক্ষায় থাকলাম,
স্বঘোষিত শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ করতে
এমনটিই কসাইয়ের দোকান তৈরি করে দেবে সভ্যতা ।

আমরা হারাবো পঞ্চভূতে,
চলে যাব মিলনের অন্তিম দিনে দেখবো পৃথিবীর মহাকাশ যাত্রা ।

বৃত্তের বাইরে -সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়










বৃত্তের বাইরে
   -সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়

কিছু শব্দ মাথায় আসছে,
নতুন করে বুঝতে হচ্ছে !
সাংবিধানিক আচার,
কাঠামোর ভিত্তি, বিজ্ঞাপনের যুক্তি,
সবেতে এইমুহুর্তে একটি জলীয় আস্তরণ !

কেউ কাগজে কলমে বিশ্বাসী,
কেউ আবার আপন স্বার্থে আত্মবিশ্বাসী!

সে-ও রোজ কিছু লেকচার লিখে চলেছে,
এই দুঃসময়ে বন্ধু কেউ সাহায্য চাইলে বলছে 
ছন্দের পতন ঘটেছে,
তার কথায় অক্ষরের নাকি অবাধ্য আচরণ !

রাজনীতিতে স্বজনপোষণ,দোষ গুণের, 
একটু উর্ধে উঠে একটা কথা প্রাণের।
বিন্দু বিন্দুতে সিন্ধু তৈরি হয়,
তাই চেষ্টা না হয় করি একটু সাহায্যের সমবায়।

পরিচিত বৃত্তের বাইরে এসে নিজেকে পড়ি,
দেখোই না এই সহায়তাটুকুই করতে পারি ।


ছলনা -সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়














ছলনা
 -সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়

এতোগুলো দিন কেটে গেল,
কত রোদ্দুর ছায়ায় রোজ সময় কেটে গেল।
তবু ছোট্ট আকাশে সীমারেখা টানা গেল না !
এ পথ সে পথ ঘুরে,
কেন মায়াহীন মিছে এই ছলনা ?
                        
একটা আয়না চাইলাম নিজেকে দেখবার,
সেও লুকিয়ে রাখতে হবে বারংবর !
তুমি আকাশের মানেটা বুঝতে পারোনি,
ওটার ব্যাপ্তি হয়তো বোঝোনি ।

আমি ছাড়া তোমার পৃথিবী হয় না,
জানো না বয়ে আসা অবিশ্বাসী বাতাস জীবানু বয়ে আনে,
অবিশ্বাস নিয়ে তাই ওই পথে চলো না !
বাঁধ ভাঙা গেলে ঘরে প্লাবন ডেকে আনে।

আমার আকাশে নক্ষত্রের মতো জ্বলতে,
তোমাকেই সীমারেখা টানতে হতো।
একটা আয়না নিয়ে নিজেকে না হয় দেখতে

দেওয়ালে এপিঠ ওপিঠ দুই সমান হতো।

“কাকর বাবা ” - সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়














কাকর বাবা     
         -সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়

তারাশঙ্কর চক্রবর্তী দক্ষিণ কলকাতার এক নামকরা স্বর্ণ ব্যবসায়ীর দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুসব বড় দৈনিক কাগজে এই হেডলাইন দিয়ে খবরটি বের হয়েছিলো। সেই রহস্য উদঘাটন করতে এবারে আমাদের তারাপীঠে আসা। আমার সঙ্গে জ্যেঠুমনি আর জ্যেঠুমনির বন্ধু লালজ্যেঠু। জ্যেঠুমনিকে সবাই চেনেন অপরাজিত রুদ্র নামে। বাবা ও পাড়ার প্রতিবেশী সবাই অবশ্য ডাকে ছটকু দা নামে, জ্যেঠুমনির পেশায় কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হলেও ক্রিমিনাল সাইকোলজি নিয়ে বেশ পড়াশোনা করেছে এবং তাইকুন্ডু বক্সিংয়ে বেশ পারদর্শী। দেশ-বিদেশের বহু প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে শীর্ষ স্থান অধিকার করেছে। তবে বর্তমানে সব ছেড়ে ছুড়ে এখন পেশায় ক্রাইম আনালিস্ট অর্থাৎ অপরাধ বিশ্লেষক। ডিটেকটিভ কেন নয় উত্তরে জ্যেঠুমনি বলে অপরাধী ধরার থেকে তাদের অপরাধকে বিশ্লেষণ করার প্রতি তার মূলত ইচ্ছে।  জ্যেঠুমনির একটা শখ হল নিজের ঘরে একটা ল্যাবরেটরি আছে, অবসর সময় সেটিতে নিজের কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায় আর আমি হলাম তার একমাত্র অ্যাসিস্ট্যান্ট বলা চলে। জ্যেঠুমনির এক বন্ধু আছে, সেই ছেলেবেলা থেকে পারিবারিক বন্ধু মানে আমার বাবার সাথেও তার বন্ধুত্ব। ওর ভালো নাম বিশ্বনাথ, ডাক নাম বাবুলালআবার কেউ বলে লালকিন্তু বেশ ইন্টেরেস্টিং চরিত্র । এই লালজ্যেঠুর রাগ সবসময় তার নাকের ওপর, সাহসী উনি কালি মায়ের ভক্ত আর সুযোগ পেলেই আমাদের বাড়ির সবাইকে বকে দেয়, আর অভিমান করা তার যেন নেশা, অল্প বয়েসে ওনার মা মারা গিয়েছিলেন, ছেলেবেলায় পড়াশুনো করতে পারে নি, কিন্তু বাস্তব হল খুব পরিশ্রমী, ভালো মানুষ আর সত। আমাদের পৈতৃক ভিটেতে তার যাওয়া আসা, আমার মা আর জ্যেঠিমা তাকে নিজের ছেলের মতন ভাবে।
এবার ঘটনাটা বলি, ছয়মাস আগে ৫৮ বছর বয়স্ক তারাশঙ্কর বাবু তারাপীঠের প্রায়ই তারা মায়ের দর্শন আসতেন। কিছু মাস আগে আসার পর হঠাৎ এক সকালে তারা মাহোটেল থেকে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। লোকাল পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করে চলেছে কোন কিনারা করতে এখনো পারিনি, তবে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে কিছুই পাওয়া যাইনি, রিপোর্টে আকস্মিক বেশি ঘুমের ওষুধ খাওয়ায় হৃদযন্ত্র বিকল হয়েছে বলা হয়েছে আর পুলিশ হোটেলের ঘর থেকে মৃতদেহের পাশে পেয়েছে একটি খোলা জামাকাপড় ভর্তি খালি বাক্স । তবু এই তারাশঙ্কর বাবু এতটাই সুস্থ ছিলেন যে ওই বয়সেও ঢাকুরিয়া লেক দুইবার ছুটে পাক দিতেন,তাই পরিবারের কেউই সেটা মেনে নিতে পারেননি। তারাশঙ্কর বাবুর থাকেন কাঁকুলিয়ায়, তারাশঙ্কর বাবুর দাদা উদয়শংকর আমার বাবার বন্ধুর পরিচিত মানুষ, তাই দায়িত্ব দিয়েছেন জ্যেঠুমনিকে আসল ঘটনার একটা কিনারা করতে। পরে উদয়শংকর বাবুর কাছ থেকে জ্যেঠুমনি জানতে পারে যে তারাশঙ্কর বাবুর গড়িয়াহাটের দোকানে কিছু হীরের ষ্টক মেলাবার সময় কিছু হীরে কম পাওয়া গেছে যেটি তার ম্যানেজার আনন্দ তারাশঙ্করবাবুর দাদা উদয়শংকর বাবুকে সবটা জানিয়েছিলেন, যদিও সেটি জানা গিয়েছে তারাশঙ্কর বাবুর মৃত্যুর পরে। তারাশঙ্কর বাবুর পুরো পরিবার তারাপীঠে এক কাকর বাবার একনিষ্ঠ ভক্ত আর কাকর বাবা তারাপীঠ মহাশ্মশান থাকেন। তাই বাবার দর্শন করে কিছুটা ঘটনাটা বিসয়ে আরও কিছু তথ্য জানবার উদ্দেশ্যে জ্যেঠুমনির সাথে এখানে আসা। তবে এখানে এসে হোটেলটা ভালো লাগেনি, হোটেলটা বেশ ভিতরের দিকে, তার ওপর দরজায় শুধু লক্ সিস্টেম বলতে একটা ছিটকিনি,ভিতরে কোন খিলান নেই, পুরোটাই নিরাপত্তা দাঁড়িয়ে আছে একটা অপলকা ছিটকিনির উপর। হোটেলটি খুব একটা পরিষ্কার সেটাও বলা যাবে না, চারপাশ নিস্তব্ধ নিঝুম। উদয়শংকর বাবুর ম্যানেজার আনন্দবাবুর থেকে জানলাম উদয়শংকর সব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, কিছুটা অবাক হয়েছিলাম শুনে !
সকাল হতেই ঘুমে ভেঙ্গে আড়মোড়া ভাঙছি হঠাৎ পাশ ফিরে লাল জ্যেঠুকে দেখে পিলে চমকে উঠলাম, দেখি তার গায়ে একটা ছেঁড়া চাদর, মাথায় ধুলো মাখা কাপড়, গায়ে একটা ফাতুয়া আর লুঙ্গি, মুখে হাবিজাবি কি মেখেছে। আমাকে দেখে একটু হেসে দেখি লাল জ্যেঠু হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে গেল। আমি অবাক হয়ে জ্যেঠুমনিকে জিজ্ঞেস করতেই জ্যেঠুমনি মুখে আঙ্গুল তুলে বলল চুপ করতে। তারপর হাসতে হাসতে বলল-ক্রমশ প্রকাশ্য টুনি...একটু অপেক্ষা কর তোর সবসময় তাড়াহুড়ো।এবার দেখি সারাদিন লালজ্যেঠু বেপাত্তা তবে বার কয়েক জ্যেঠুমনি ও লালজ্যেঠুর মোবাইল কথা হয়েছে কথাবার্তা মধ্যে হোটেলের ম্যানেজার ভদ্রলকের নাম খালি শুনতে পাচ্ছিলাম কয়েকবার, আমিও কিছু আর জানতে চাই নি। তারপর অনেক রাতে লালজ্যেঠু ফিরে এসেই তাড়াহুড়ো করে দেখি বারথ্রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে এসে ধপাস করে শুয়ে পড়লো। লালজ্যেঠু খালি ডিনার শেষ করে শুতে যাবার সময় জ্যেঠুমনির দিকে তাকিয়ে বলল-বুঝলে রুদ্র সাহেব এরা একদম একদম পাঁকাল মাছ। সাবধানে থাকতে হবে।

সব কিছু কীরকম যেন গোলমেলে লাগছিল। তখন রাত্রি সাড়ে বারোটা, আমার কেমন যেন ঘুম আসছিলো না, কেমন যেন একটা অদ্ভুত লাগছিলো। জ্যেঠুমনিকে দেখি পায়চারি করছে চিন্তান্বিত জানালার ধারে আর টেবিল লাম্পে একটা ঘট থেকে একটু একটু করে ফেলে টেস্ট টিউবে নিয়ে আর অনেক কিছু মিশিয়ে বার বার কি যেন দেখছে আর খাতায় লিখছে। লালজ্যেঠু পাশ ফিরে নাক ডেকে মড়ার মতন ঘুম দিচ্ছে, এরপর আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরেরদিন সকাল লালজ্যেঠু দেখি পায়চারি করছে আর জ্যেঠুমনিকে বলছে -আমাকে কিন্তু কিছু লিখতে বলবি না, তুই জানিস তো লিখতে গেলে আমার পেন ভেঙ্গে হাইড্রেন চলে যায়। জ্যেঠুমনি হাসতে হাসতে বলতে লাগলো-একটু চুপ কর, তোকে যখন লিখতে বলবো তুই লিখবি মানে লেখবার অভিনয় করবি। তাতে তোর কি অসুবিধা ?” কথা শুনে লালজ্যেঠু হাসতে  লাগলো। দুপুরে জ্যেঠুমনি একটু বের হয়েছিলো বলল- টুনি আমি একটু থানা থেকে আসছি।আমি কিছু বলবার আগেই বের হয়ে গেলো। জ্যেঠুমনি বিকেল সাড়ে পাঁচটা ফিরে এলো এসেই বলল-একটু গরম চা আর পাকোড়া হলে মন্দ হয় না লাল, কি বল ? ” লালজ্যেঠু বেল বাজিয়ে অর্ডার দিয়ে দিলো। হঠাৎ দেখি লালজ্যেঠু আলমারি থেকে বাক্স বের করে একটা আংটির বাক্স বের করল খুলে একটা হীরের আংটি, মোটা একটা গলার চেন বের করে পড়ে নিল, আজকে তাকে মনে হবে কলকাতার কোনও শেঠ। আমি শুধু অবাক ভাবছি, এই বস্তুটি আমাদের বাড়ির কারোর নেই বলে তো জানি, তাহলে লালজ্যেঠু এখন এইসব কেন পড়ছে কেন, আর এটা পেলই বা কোথায়? জ্যেঠুমনি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল- টুনি তুই যা ভাবছিস এটা সেটা নয়,এটা পাতি একটা আমেরিকান ডাইয়ামন্ড তবে কোম্পানিটা ভালো। উদয়শংকর বাবু আনিয়ে দিয়েছেন আমি বোকার মত ছুপ করে গেলাম। ইতিমধ্যে চা পাকোড়া হাজির আমারা সেগুলোর সদ্গতি করছি, তখন জ্যেঠুমনি বলে উঠলো-একটু শুয়ে নে আজ রাত জাগতে হবে রাতে শ্মশানে যেতে হবে।

এরপর রাতের খাবার সেরে উঠতে দশটা বাজল আমরা ঠিক এগারটার সময় তারাপীঠের মহাশ্মশানে যখন প্রবেশ করলাম। মনে হচ্ছিল জ্যেঠুমনির ও বাবার কাছে শোনা একটা চিত্র দেখতে পাবো তাই উৎসাহটা ছিল প্রবল। শুনেছিলাম ২০ বছর আগে শ্মশানটি জুড়ে ছিল ছোট ছোট খুলির ঘর, ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ, টিম টিমে আলোয় একটা গা ছমছম ভাব কিছু সাধুদের জটলা, গাঁজার গন্ধ। কিন্ত এবার আমরা মহাশ্মশানে ঢুকে দেখলাম উন্নয়নের ধারা মহাশ্মশানে সেই প্রাচীন রূপ পরিবর্তন করে একটি শহুরে শ্মশান করে ফেলেছে। চারিদিকে এল ই ডি লাইট মোমবাতি নিয়ে ছোট ছোট দোকান পসরা, ভিতর ইলেকট্রিক চুল্লি আর একটা মঞ্চে চলছে কীর্তন পাশে বামদেবের উপাসনা স্থল এদিক-ওদিক জিজ্ঞেস করার পর সন্ধান পেলাম কাকর বাবার। এদিক-ওদিক জিজ্ঞেস করার পর সন্ধান পেলাম কাকর বাবার।
একটা বটগাছের তলায় টিলার উপর বসে আছেন আশেপাশে বেশ কিছু লোকজন, সাথে আছেন দুজন শিষ্য। একটা বড় হ্যালোজেন লাইটে চারপাশ বেশ ঝকঝকে পরিষ্কার, বাবা বসে ধ্যানমগ্ন একটি কাকর হরিণের ছালের ওপর পাশে ছোট ছোট ঘট রাখা । ব্যাপারটা দেখে জ্যেঠুমনি বলল- টুনি দেখেছিস, কাকর বাবা কাকর হরিণ ছালের উপর বসে আছেন।

আমি কাকর হরিণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে জেঠু বলল-ওরা ছোট আকারে লালচে বাদামী পিংগল রং এর ফোঁটা বিহীন হয়। হরিণের চলাফেরা ও জীবনধারণ খুবই চমৎকার। ওদের মায়া হরিণ বলাও হয়। ভয় পেলে বা শিকারী প্রাণী দেখতে পেলে কুকুরের মত ঘেউ ঘেউ করে বলে ওদের বার্কিং ডিয়ার নাম। তারপর হেসে বলল-বুঝলি কেন এনার নাম কাকর বাবা ? লালজ্যেঠু বলে উঠল-ইট ইস নট এ ফর পিসেস অফ টক।শুনে আমরা হেসে উঠলাম। জ্যেঠুমনি বলল-বুঝলি এই মহাশ্মশান এর উপর বসে থাকা মানে বাবাজির যথেষ্ট ক্ষমতার জোর আছে।লালজ্যেঠুকে দেখি কথা গুলো যেন গ্রগাসে যেন গিলছে আর বলে উঠলো- বুঝলাম একটা থ্রিল আছে..., আমি বললাম- বুঝলাম বাকিটা এখন কিন্তু ধোঁয়াশা... । জ্যেঠুমনি একটা মৃদু হাসি দিলো।

যাক আমরা বাবার সামনে উপস্থিত হলাম, বাবা তখন ধ্যান ভাঙ্গার পড়ে একটু পরে আগত অতিথিদের নানা কথা শুনে নিজে উপদেশ দিতে লাগলেন। লক্ষ্য করলাম কেউ একটাও ঘট পেলেন না। এরপর আমাদের পালা আসতে বাবা দেখি খুশি হয়ে আমাদের নাম,বাসস্থান জানতে চাইলেন। জ্যেঠুমনি বলল-আমরা কোলকাতা থেকে এসেছি আমার এই বন্ধু  সাংবাদিক একটু লেখালিখি করে এখানে তারা মা কে দেখতে এসেছিলাম, ও আপনার কথা শুনে খুব আগ্রহী হয়ে পড়েছে আপ্নকেনিয়ে একটা প্রতিবেদন লিখবে তাই ওকে নিয়ে এলাম ওর ইচ্ছে আপনার একটা ইন্টারভিউ নিয়ে কলকাতায় কাগজে ছাপবে।  শুনে লালজ্যেঠু প্রায় লাফিয়ে উঠে পড়তে যায়, আমি হাতটা চাপতেই বসে পড়লো, এরপর লালজ্যেঠু যা সব প্রশ্ন শুরু করলো আমাদের প্রায় পালাতে পারলে হয়, সবটা উল্টোপাল্টা হওয়া বাকি যেমন বাবা আপনারা কি মায়ের আরাধনা করতে আফিন,গাঁজা গ্রহন করেন ? “ আপনি কতদিন ধরে এই জটা রেখেছেন ? আপনি কি হরিনের ছালে উপর কেন বসে আছেনসে আরও কত কি ? ” দেখলাম রীতিমত বাবা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছেন, তবে উত্তর দিচ্ছেন আর লালজ্যেঠু জ্যেঠুমনির কথার মতন তার পেন চালিয়ে যাচ্ছে লেখা যদিও লেখা কাগজে পড়ছে না তবে অভিনয়টা অসাধারন করে চলেছে। প্রশ্নের আধিক্য একসময় এতো বেশি হতে লাগলো কিছুটা ম্যানেজ করতে জ্যেঠুমনি বাবাকে তাড়াতাড়ি বললেন-আমাদের একটু আশীর্বাদ করবেন বাবা।বাবা যেন এবার একটু স্বস্তি পেলেন, তারপর জ্যেঠুমনির হাতে একটা ঘট দিলেন আর জ্যেঠুমনিকে বললেন তোমারা কিছু দক্ষিণা দিয়ে এখানের হোটেলের নাম আর ঠিকানা লিখে দিয়ে যাও। জ্যেঠুমনি তার শিষ্য আসতে সবটা লিখে দিলো। এরপর আমরা বের হয়ে গেলাম হোটেলে যখন এলাম তখন রাত্রি ১ টা। ফেরবার সময় হঠাৎ বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে হোটেলে রাস্তাঘাট অনেক নিস্তব্ধ জনশূন্য।

        ফ্রেশ হবার পর দেখি রাত অনেক হয়ে গেছে দেড়টা বাজে। কিন্তু ঘরে ফিরে আসতে না আসতেই জ্যেঠুমনি তাড়াতাড়ি ব্যস্ত হয়ে পড়ল দেখি পকেট থেকে উঠে দেখি স্মিথ অ্যান্ড উইলসন ০.৩২ ক্যালিবার রিভলভারটি আর একটা সদ্য ফ্লিপকার্ট থেকে অনলাইনে কেনা রিচার্জেবল আরবান গিয়ারের এল ই ডি টর্চটি বালিশের তলায় ঢোকাল। এরপর ইউটিউবে বসে বসে হেডফোন দিয়ে কিছু শুনতে লাগলো। আমি জিজ্ঞেস করতে বলল-টুনি রাতটা সাবধানে থাকতে হবে, আজকে কিছু একটা ঘটবে। শুনে লালজ্যেঠু চোখটা কটমট জ্যেঠুমনির দিকে তাকিয়ে দেখে আবার চুপকরে মাথায় চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো। ঘরের চারিদিক অন্ধকার মৃদু নাইট ল্যাম্পটি জ্বলছে, ঘুম আসছে না গরিতে দেখি তখন রাত আড়াইটে হঠাৎ দেখি একটা অদ্ভুত ডাক, অনেকটা কুকুরের মত ডাকটা শুনতেই জ্যেঠুমনি আসতে করে তার বাম একপাশ ফিরলো অন্ধকারে থাকলেও জানলা দিয়ে আসা হাল্কা আলোয় বুঝলাম তার হাত এখন বালিশের তলায়। তারপর দরজায় ক্যাঁচ করে শব্দ ঠক করে ছিটকিনি খোলার একটু আওয়াজ তারপর আসতে করে একটু খুলে গেল। উত্তেজনার যখন পারদ চরমে উঠেছে আর চোখে দেখতে ওদিকে লালজ্যেঠুও চুপ, তারপর হঠাৎ চারিদিকে বাঁশির আর বেশ কিছু আওয়াজ ধুপ ধুপ করে শব্দ। এর মধ্যে জ্যেঠুমনির টর্চ জ্বলে উঠেছে, সামনে ছুটে গিয়ে আমিও লাইট জ্বেলে দিয়েছি, দরজার সামনে দেখি কাকর বাবার দাঁড়িয়ে আর এক শিষ্য তার পিছনে। কাকর বাবা মাথায় একজন ইন্সপেক্টর তাক করে রিভলভার ধরে আর তার পিছনে চারজন পুলিশ।  জ্যেঠুমনি বললেন-থ্যাংকস দীপঙ্কর বাবু, একদম ঠিক সময় এসেছেন, ওদের নিয়ে যান  আর হ্যাঁ ওরা যেন কোন যোগাযোগ করতে না পারে এখন থেকে। এই হল অপরাধী তারাশঙ্কর বাবু মার্ডার কেসের আসল বিশ্লেষণ কাল থানায় সবার সামনে করবো
পরেরদিন স্থান পুলিশ থানা সবাই বসে উদয়শংকর বাবু ও পরিবারের লোকজন, হোটেলের মালিক, ওসি দীপঙ্কর বাবু আর বেশ কিছু পুলিশ কর্মী। জ্যেঠুমনি বলতে লাগলেন -আসলে রহস্যটি বের করতে মুল সুত্র হল ওই মাটির ঘট, যেটি লালকে ছদ্মবেশ করিয়ে ভক্ত সাজিয়ে পাঠিয়ে আনিয়ে পরীক্ষা করেছিলাম আর ব্যাপারটা জলের মতন পরিষ্কার হয়ে যায়। আসলে কাকর বাবা ওই ঘটে মায়ের চরণামৃত দেবার নামে এপিট্রানামে একটি তরল ওষুধও ব্যবহার করতেন তারা যা পান করলে অজ্ঞান নিশ্চিত। আর এই ঘট বাবা দেখে শুনে দিতেন, একটু অর্থশালী ভক্তদের আর তার দুজন শিষ্যের কাজ ছিল হোটেল খুঁজে তাদের সনাক্ত করে সব কিছু কেড়ে নেওয়া আর ঘট সরিয়ে ফেলা। কাকার বাবার আস্থানাতে আমি একই ঘত দেখতে পাই। তারাশঙ্কর বাবু এতদিনের এমনিতেই বাবাকে অনেক উপঢৌকন দিতেন, কিন্তু এবার বাবা কথায় মন্দিরের জন্য তার আনা হীরের কথা জানার পর আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেন নি, সবটাই হাসিল করার মতলবে বেশি পরিমান এপিট্রা দিয়েছিলেন কিন্তু তারাশঙ্কর বাবু সেটা খেয়ে এই অবস্থায় পরেন হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে গিয়েছিলো আর এরাই বাক্স থেকে সব হীরে আত্মসাৎ করে নিয়েছিলো। শ্মশানে বাবা আর সাংবাদিক বলে পরিচয় দেওয়া লালের হাতের হীরের আংটি আর গলাতে মোটা চেন দেখে ঘট ওকে দিয়েছিলো,আর আমাদের থিকানা লিখে নিয়েছিল তারপর তো এই ঘটনা হবে এটাই স্বাভাবিক।

সব শুনে হোটেলের মালিক রতন বাবু আর উদয়শংকর বাবু জ্যেঠুমনিকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন– “সাবাস অপরাজিত বাবু সত্যি ভাবা যায় না এই এদের মনে শেষমেশ... এই ছিল।জ্যেঠুমনি একটু হেসে বেশ চড়া সুরে একটু হোটেলের মালিক রতনবাবুর কাছে এসে বললেন-সেতো বুঝলাম, কিন্তু এবার বলুন তো আর আপনার মনে আসল উদেশ্য কি ছিল ?” কথাটা শুনে এবার ঘরের সবার সত্যি সবার অবাক হবার পালা। কথাটা শুনেই হোটেলের মালিক রাতানবাবু চেঁচিয়ে উঠে বলল–“উদেশ্য মানে? আপনি কি বলছেন মশাই উল্টোপাল্টা?” জ্যেঠুমনি শান্তভাবে বলতে লাগলেন –“আপনার এই হোটেলে বিনা খিলানের অপলকা ছিটকিনির দেওয়া ঘর আমাকে থাকতে দেওয়া আমাকে রীতিমত অবাক করে,তাও সেটি যে উদয়শংকর বাবু ঘর ঠিক করে যে দেননি, সেটা আমি ওনার সাথে কথা বলে জেনে গিয়েছিলাম। কথাটা বলার সাথে একটা অদ্ভুত কাণ্ড ঘটনা ঘটলো দেখি উদয়শংকর সাথে দাঁড়িয়ে থাকা ম্যানেজার আনন্দবাবু হঠাৎ একটা ধারালো অস্ত্র নিয়ে উদয়শংকর বাবুর গলায় চেপে ধরেছে, আর কিছু সবার বোঝার আগেই কান ফাটিয়ে একটা আওয়াজ,দেখি জেঠুমনি হাতের স্মিথ অ্যান্ড উইলসন গর্জে উঠেছে আর আনন্দবাবু চিৎকার করে হাত ধরে বসে পড়েছেন। ওসি দীপঙ্করবাবু আর দুজন কনস্টেবল রতনবাবু আর আনন্দ বাবুকে ছুটে গিয়ে ধরে হ্যাঁচকা টানে ফেলে হাতে হ্যান্ড লকআপ পরিয়ে দিলেন।ওদিকে আনন্দবাবু ব্যাথায় চিৎকার করে চলেছেন। ওসি দীপঙ্কর বাবু বললেন-নো প্রবলেম অপরাজিত বাবু গুলি হাত ঘষে চলে গেছে ইউ ক্যান ক্যারি অন।জ্যেঠুমনি হেসে আবার শুরু করলো-যেটা বলছিলাম এখন যদিও ব্যপারতা আরও পরিস্কার হয়ে গেল তবু বলিঘরটি আনন্দবাবুর ঠিক করে দেওয়া, তাহলে উদয়শংকর নাম নিয়ে আমাকে ভুল বোঝবার বা লুকবার কারণ কি ? কারণ আমার তদন্ত ভুল দিকে চালিত করা, লাল আনন্দবাবুকে শ্মশানে কাকর বাবার সাথে আমারা আসবার দিন দুপুরে দেখতে পেয়েছিল, বেশ কয়েক ঘণ্টা আপনি বাবার সাথে গল্পে মশগুল ছিলেন, আপনার সাথে কাকর বাবাজীর যোগাযোগ যে ঘনিষ্ঠ সেটুকু সবটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে আর লাল বাবার আড্ডায় গিয়ে সেখান থেকে ফোন করে আমাকে সব জানিয়েছিল। এছাড়া গতকাল ধরা পরার পর কাকর বাবা আর তার স্যাঙ্গাত সবটাই দীপঙ্কর বাবুর কাছে উগড়ে দিয়েছে। তখন সবটা আমার ক্লিয়ার হয়ে যায়। কি দীপঙ্কর বাবু তাহলে আপনারা আপনাদের কাজ সেরে ফেলুন। আসল অপরাধীরা আপনার সামনে। লালজ্যেঠু লাফিয়ে উঠে বলে উঠলো- ইট ইস আ ম্যাটর অফ টেন পিসেস অফ টক।   উদয়শংকর বাবু জ্যেঠুমনির  হাতটি ধরে ধ্যনবাদ দেবার সময় আনন্দ বাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন- তোমাকে না আমার ভাই ছেলেবেলা থেকে মানুষ করেছিলো, এতো কষ্ট করে গড়ে তোলা ব্যবসা বিশ্বাস করে সবকিছু ছেড়ে দিয়েছিলশেষমেশ তুমি এই চক্রান্তে? জ্যেঠুমনি বলল-"আসলে কি জানেন অপরাধী মন তখন তৈরি হয় যখন আমরা চোখ বন্ধ করে কাউকে বিশ্বাস করতে শুরু করি তাকে পরখ না করে। আপনার দাদা আসলে সেটাই ভুল করেছিলেন।"

দীপঙ্কর বাবুর এবার একটু হেসে জ্যেঠুমনির হাত দুটো ধরে বলে উঠলেন –“ স্যার একটা কথা না বলে পারছি না, আপনার ভিসিটিং কার্ডে আপনার নামের পাশে ক্রাইম অই অ্যানালিস্ট অর্থাৎ অপরাধ বিশ্লেষককথাটা গভীর এবং সত্যি আমি বুঝতে পারছি, অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার।




বিশ্বাসে নিঃশ্বাস -সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়















বিশ্বাসে নিঃশ্বাস
         -সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়

বিশ্বাস নিঃশ্বাসের মতন,
যাওয়া আসার পথে একটা নিয়ম চাই।
একটু এদিক ওদিক হলেই,
হয় পদস্খলন,না হলে মরণ ।

শিকড়ের পচনের কেউ খোঁজ রাখি না,
খালি ভাবি নতুন পাতা আসছে কি ?
আমরা শুধু ফুল ফল নিয়ে বেঁচে থাকি !
অথচ ভিত্তিপ্রস্তর নিয়ে মাথা ঘামাই না।

স্তম্ভের উপর যে ভবিষ্যত মজবুত করে গড়ে,
তাকে হারিয়ে ফেলি ক্রমশই ।
অবিশ্বাস এখান ওখানে হাঁতরে বেড়াই,


শেষমেশ দমবন্ধ পরিবেশে সবটাই মারা পড়ে।













শনিবার, ২৫ জুলাই, ২০২০

ঈশ্বর থাকুন না হয় দূরে - সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়















ঈশ্বর থাকুন না হয় দূরে
সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়

ঈশ্বর স্বপ্নে এসেছিলেন,
একদিন কাকভোরে দেখা দিয়েছিলেন ।
পদতলে ধূলিকণা মেখে এলেন...
বললেন সেগুলো‌ দেবেন
লেগে আছে পদধূলি সবাইকে দেবার।

কিন্তু একি ! ঈশ্বরের চোখে জল ?
      ঈশ্বর এখন পরিশ্রান্ত রঙ মেখে,
বিভিন্ন বেশভূষা সেজে মানুষের অত্যাচারে !

তিনি একদিকে দুধ গঙ্গায় অভিষিক্ত,
অন্যদিকে নিয়মাবিধিতে রক্তাক্ত।
কোথাও চাদরে তার দমবন্ধ,
দেশে দশে ..
ছড়িয়ে ছিটিয়ে খালি তার গায়ে পায়ে বারুদের গন্ধ।

ঈশ্বর আছেন
   সবার মনে খোলা মাঠে ঘাটে পুকুরে ।
বন্ধ মনের খোলা জানালাতে,
সবুজ মনে বা  শষ্য-শ্যামল ক্ষেতে।

তিনি মানুষের উর্ধ্বে,
সমাজের উপরে থাকেন।
এখন শুধুই স্বপ্নে আসেন আর চলে যান।

দুরত্ব‌ই ভালো, বেশি কাছে থাকলে
আবার পড়বেন নিয়মের বেড়াজালে।
তাই বললাম থাকুন দূরে, দেখি না হয় স্বপ্নে
সম্পর্কটা তো টিকে থাকুক অন্তত মনে।


শান্তিনিকেতন বার্তা - সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়













শান্তিনিকেতন বার্তা
সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়


আজ আবার হারিয়ে গিয়েছিলাম,
ভোর হতেই আবার স্বপ্নভঙ্গ !

সারাদিন শুনেছি মেঘেদের ক্রন্দন,
বৃষ্টির জল ঝরেছে পাহাড় থেকে সমতলে।

রবি আজ সারাদিন অস্তাচলে,
তাই কিছুটা তার অক্ষর সংলাপ।

শুনতে পাই গীতাঞ্জলির ক্রন্দন,
শান্তিনিকেতন বার্তা !

তবে মাটির বুকে পায়ের চিহ্নগুলো আছে।
আছে দেশ ও দশের গান।

আজ‌ও ছোট ছোট নদী গুলো ব‌ইছে আঁকে বাঁকে,

কাজ করে চলেছি পুরাতন ভৃত্যের মতন ।


https://www.bangla-kobita.com/sanjukolm/news-of-santiniketan/


আমার পতাকাটি বুকে নিয়ে - সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়














আমার পতাকাটি বুকে নিয়ে
-সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়

আজ স্বাধীনতা,
বলব হে স্বাধীনতা তুমি দীর্ঘজীবী হও...।

ভাবছি আর লিখবো না এই পরাধীন জীবনে কবিতা,
রোজ ইচ্ছে করে আমার পতাকাকে নিজের বুকে আঁকরে নিতে।
বাহাত্তর বছরের অভিমান সব মুছে দূরে রেখে আজ,
বলব-এই পঞ্চাশে স্বপ্ন ব্যর্থ না সার্থক সেটা এখন প্রশ্ন !

তবু ইচ্ছে ছিল, একটিবার আমার পতাকা বুকে পেলে,
জড়িয়ে নিতাম...নিজের বুকের মাঝে।
হয়তো রোজ রাতের আকাশে অমৃতাংশু জ্যোৎস্না দিত,
জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে...
আবহ জাতীয় বুকের মাঝে শুনতে পেতাম।

যদি আমার পতাকাটি বুকে নিতাম,
ভূমিহীন মানুষেরা ঘর বাঁধত,
প্রতিবিম্ব হীনেরা নিজেদের আয়নায় দেখত
রোজ যুদ্ধের ধোঁয়া,ধর্মের গোঁতা খেতাম না।

যদি আমার পতাকা বুকে নিতাম,
রাস্তায় আর লাল আলোর দেখতাম না সমারহ
দেখতাম না সরকারি নল দিয়ে 
অনাদরে বয়ে যাওয়া গঙ্গাজলের প্রবাহ !
দেখতাম না মায়ের বুকের লাঞ্ছনার প্রতিবাদ
সারিবদ্ধ কিছু মোমবাতির আলোয় নিয়ে পথ চলা ।

যদি আমার পতাকা বুকে পেতাম,
সব বেদনা সঞ্চয় করতাম,সবাই মিলেমিশে যৌথ পরিবারে,
আর সব সুখ সমভাবে ভাগ করে নিয়ে যেতাম ঘরে।

তবু বলবো,হে স্বাধীনতা তুমি বেঁচে থাকো
আমার বেঁচে থাকায়, স্বপ্নে, প্রেমে, কলমের লেখায়,
মুখের ভাসায়,যৌবনে লেখা কবিতায় 
ঠিক আমার মতন করে ।



সাম্প্রতিক লেখা কবিতা

ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি / রঙ্গনা পাল /পর্ব-৪০

ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি/ রঙ্গনা পাল / পর্ব-৪০         অতীত হোক বা বর্তমান নারী চিরকাল পুরুষের ভালোবাসায় বশ। হ্যাঁ কেউ কেউ কখনও কখনও ছলনা করে ...