সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০২৪

ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি / রঙ্গনা পাল /পর্ব-৪০



ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি/ রঙ্গনা পাল / পর্ব-৪০


        অতীত হোক বা বর্তমান নারী চিরকাল পুরুষের ভালোবাসায় বশ। হ্যাঁ কেউ কেউ কখনও কখনও ছলনা করে কিন্তু সেই ছলনার নেপথ্যেও থাকে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা। আর যারা ভালোবাসার কাঙাল, আমরণ ভালোবাসার জন্য তাদের কাঙালিপনা চলতেই থাকে। নিরাশার মাঝেও তারা আশার আলো জ্বালিয়ে রাখে। রাজন্যা তার স্বামীর শত অপরাধ ক্ষমা করে এগিয়ে আসে ঝড়ের বেগে। মোটামুটি জেনে ফেলেছে, স্বাধীনের কিছু একটা হয়েছে বা সে সুইসাইড করার প্রবণতা নিয়ে রাজন্যার ফ্ল্যাটে এসেছে। তবে এটাও নিশ্চিতভাবে ধরে নিচ্ছে তার অনুপস্থিতির কথা জেনেই স্বাধীন এখানে এসেছে। নাহ্ রাগ নয় এখন অনুকম্পা হচ্ছে। যাক্ জলদি একটা ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু কী করবে? মাথায় আসছে না। অপরপার্শ্বের বখাটে ছেলে ঝন্টু এগিয়ে এসে বললো- 

           -দিদি, আপনি বললে আমি অধীরদাদুর ছাদ থেকে লাফিয়ে আপনার ছাদে উঠতে পারি । ছাদের দরজাটা খোলা দেখেছি।

             -হ্যাঁ, তাই করো ভাই। তবে যা করবে খুব জলদি করো।

  ঝন্টু কাজে লেগে পড়লো। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ছাদ হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে সদর দরজা খুলে দিল। রাজন্যা দেরি না করে ভেতরে ঢুকে দেখে স্বাধীন একদিকে চিৎ হয়ে পড়ে আছে। শরীরটা নিথর হয়ে আসছে, হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। মুখ বিবর্ণ বিকৃত হয়ে গেছে। পালস্ চেক করে দেখে ধড়ে প্রাণ আছে, সবটা শেষ হয়ে যায়নি।


              এই ফ্ল্যাটেই একজন অটোচালক দাদা আছেন, যার অটোতে রাজন্যা মাঝেমধ্যে ওদিক ওদিক যায়, তাকে ফোনে ডেকে সবাই মিলে ধরাধরি করে অটোতে তুলে নিয়ে স্বাধীনকে মাধবপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। এই হাসপাতালের স্টাফ বলে খুব তাড়াতাড়ি ট্রিটমেন্ট শুরু হয়। স্বাধীনকে ডঃ শুভঙ্কর হালদারের আন্ডারে ভর্তি করানো হয়‌। প্রাথমিকভাবে সেলাইন চালু করা এবং  ডেকাড্রন ডেরিফাইলিন ইনজেকশন পুশ করা হয় তৎপরতার সাথে। ডাক্তারবাবু আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন কিন্তু বেশ খানিকটা দেরি হয়েছে ট্রিটমেন্ট চালু করতে। রাজন্যাকে ডেকে বললেন "এক্ষুনি আই সি সি ইউ-তে ট্রান্সফার করতে হবে।" স্টাফরা পরামর্শ দিল যেহেতু স্বাধীন সুইসাইড করতে চেয়েছে তাই শ্বশুরবাড়িতে যেন খবর দেওয়া হয়। স্টাফেদের পরামর্শমতো রাজন্যা শ্বশুরবাড়িতে খবর দেবার পর দক্ষযজ্ঞ বেঁধে গেল। দেবররেরা আর শাশুড়ি সাথেসাথেই মিলিতভাবে থানায় হাজির। ডঃ শুভঙ্কর হালদার অমায়িক মানুষ। প্রতিটি স্টাফকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। রাজন্যার মানসিক অবস্থা দেখে মাধবপুর থানায় একটা ডায়েরি করে রেখেছেন তার বন্ধু ওই থানার ও.সি. সুগত দস্তিদারকে দিয়ে। ডায়েরিটি রাজন্যার পক্ষে। "রাজন্যার অবর্তমানে তার ফ্ল্যাটে এসে বহুদিন নিখোঁজ স্বামীর আত্মহত্যা করার প্রচেষ্টা"। এক ফাঁকে পুলিশ কর্মচারী তাকে দিয়ে সই করিয়ে নিয়ে গেছে। রাজন্যা এতটাও জানতো না, তবে এটা জানে  পুলিশের হ্যাপা তাকে পোহাতেই হবে। হয়তো সেই কারণেই পুলিশ থানা থেকে রাজন্যার শাশুড়ি সহ দেবরদের বলা হলো- "ছেলে মরতে বসেছে তার খোঁজ না করে বৌমার নামে কেস ফাইল করতে এসেছেন? আগে ছেলেকে বাঁচান তারপর আসবেন"

             

         মথুরাপুরে আই সি সি ইউ. না থাকায় রাজন্যা চিন্তায় পড়ে যায়। স্টাফরা আবারও প্রাইভেট হাসপাতাল আমরিতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিল। সারাদিন পেরিয়ে মাঝরাত্তিরে এসেও , স্বাধীনের এতটুকু উন্নতি নেই। কাজেই ভোর হতে না হতেই এই হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স ড্রাইভার যদুনাথকে নিয়ে তখন বেঁচে থাকা মাইনের দশহাজারকে সম্বল করে সাথে অনুনয় বিনয় করে মেজদেবরকে নিয়ে আমরির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। খবর পেয়ে রেণুকা ভাগ্যিস ফিরে এসেছিল তাই রাজর্ষিকে নিশ্চিন্তে রেণুকার কাছে রেখে স্বাধীনের চিকিৎসার জন্য দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিতে  পেরেছে। একদিকে সেলাইন সহ স্বাধীনকে সামলানো, অন্যদিকে যদুনাথের মরণ-বাঁচন গাড়ি চালানো দুইয়ে মিলে রাজন্যার পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। মাঝরাস্তায় রাজন্যা  বোনের বরকেও সাথে পেল। ভরসা বাড়ল কিছুটা। গাড়ি চালানোর বেগ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হঠাৎ করে ডায়মন্ডহারবারের কাছে এসে একটা কাককে অ্যাম্বুল্যান্সে ধাক্কা খেয়ে সটান মরে যেতে দেখল রাজন্যা। এ এক বীভৎস দৃশ্য! মুহূর্তে রাজন্যার পালস্ রেট বেড়ে গেল। ভয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। একমাত্র গুরুদেব আর ঈশ্বরের নাম করে কিছুটা ধাতস্থ হলো। এরমাঝে কোনরকমে ঢাকুরিয়া আমরিতে পৌঁছতেই ধড়ে প্রাণ এলো। এখানে পৌঁছনো মাত্র স্বাধীনকে ট্রলিতে শোয়ানো হলো, ক্ষণিকের মধ্য তিন-চারজন ডাক্তার এসে স্বাধীনের বুকের কাছে হাত দিয়ে ওদের সিস্টেমে নানাভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখে কোনো সেন্স নেই, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম , ঠোঁট কালচে হয়ে গেছে। সেই মুহূর্তে রাজন্যা শুধু বলতে পেরেছে-"আমি নার্সিং স্টাফ, এ আমার হাজব্যান্ড। কী খেয়েছে বলতে পারবো না তবে পেসেন্টকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য আই  সি সি ইউ-তে নিয়ে আপনাদের মত ট্রিটমেন্ট শুরু করুন, টাকাপয়সার জন্য কিছু আটকাবে না"


           -এরপর আগামী সপ্তাহে......

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সাম্প্রতিক লেখা কবিতা

ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি / রঙ্গনা পাল /পর্ব-৪০

ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি/ রঙ্গনা পাল / পর্ব-৪০         অতীত হোক বা বর্তমান নারী চিরকাল পুরুষের ভালোবাসায় বশ। হ্যাঁ কেউ কেউ কখনও কখনও ছলনা করে ...