শিক্ষক দিবস
দিনটি ছিল বাগদেবীর আরাধনার দিন ,এই বছরে আমরা সকলেই স্কুল থেকে বিদায় নেব আমাদের স্কুলে মস্ত বড় হল ঘর আছে । সেখানেই পূজার ছিল হয়েছিলো আয়োজন।
এবারই আমাদের স্কুল জীবনের শেষ বছর, তাই সবার মনটা যে বড়ই ভারী, সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের অনেকেই ,সবার মনে কেমন যেন এক বিদায়ের অনুভূতি।
নাটক,গানের সুর,আর কবিতার আসরে মনটা হালকা হয়ে গেল কিছুটা,তারপর চলে এলাম সবাই বাড়ি ।
এরপর কেটে গেছে এক এক করে অনেক বছর, কৈশোর পেরিয়ে,যৌবন তখন প্রায় অন্তিম লগ্নে করেছে পদার্পণ ।
আজ সব কিছু ভুলে বাস্তবের কঠিন সত্যর সম্মুখীন সবাই,
কাজ করে,হেঁটে চলেছি বড় রাস্তা দিয়ে,হঠা দেখি সামনে মাস্টার মশাই সামনে,ছুটে গিয়ে একটা প্রনাম করি।
কেমন আছেন মাস্টার মশাই ?
আমায় চিনতে পারেন ?
সত্তর অতিক্রান্ত সেই শুভ্র কেশ,পরনে খদ্দরের পাঞ্জাবি আর সাদা ধুতি পরিহিত মাস্টার মশাই গুরুগম্ভীর স্বরে বললেন তুই তো সঞ্জয় উবাচ, টেন সি ।
আমি সত্যি স্তম্ভিত আনন্দে গলা বদ্ধ, কত দিনের পরে ঠিক
বৃদ্ধের চোখে তখন আনন্দ অশ্রুধারা, তারপর কত প্রশ্ন তাঁর।
হা, মাস্টার মশাই আমি সেই যাকে পড়া না করায় ক্লাস থেকে বের করে দিয়ে ছিলেন । খুব রাগ হয়েছিল মনে । নতুন কৈশোর এর সূচনায় শরীরে বয়ে গিয়েছিল এক অপমানের ছোঁয়া, এসেছিল বিদ্রোহী ভাব ।
পরিচয় হয় অপমানের সঙ্গে কারন অন্য সবার হাসি, তাচ্ছিল্য,পরিহাস করেছিল আমায় হেয়।
খুব রেগে মন না চাওয়া বাজে কথা হয়েতো বলেছিলাম আপনার অগোচরে ।
তখন ছুটির ঘন্টা সবে পড়েছে, আমি তখনো কান দুখানি ধরে নীলডাউন।
হঠাৎ আপনি এসে আমার মাথায় হাত দিয়ে বলেছিলেন কষ্ট পেয়েছিস তো ?
দেখিস তোর এতে ভালো হবে কারণ তুই আর ভুল পথে যাবি না ।
হ্যাঁ, মাস্টার মশাই আমি আজ ঠিক মানুষ হয়েছি যেমনটি আপনি চেয়েছিলেন ,আপনার থেকে শিখেছি
"যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে "
আপনি আমাকে আপনার সেই যৌবনের সেরা সময় দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন এক নির্ভীক ভবিষ্যতের যুবককে ।
যে শুধু জানে "অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে"।
নতজানু হয়ে যখন আমি প্রনাম করতেই আমায় মাস্টার মশাই আবার বুকে টেনে নিলেন,সেদিনের সেই ভুল ঠান্ডা হলো তার শীতল পরশে।
শ্রী সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়
কলিকাতা
৯৮৩১৮৪০১৯৬
এবারই আমাদের স্কুল জীবনের শেষ বছর, তাই সবার মনটা যে বড়ই ভারী, সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের অনেকেই ,সবার মনে কেমন যেন এক বিদায়ের অনুভূতি।
নাটক,গানের সুর,আর কবিতার আসরে মনটা হালকা হয়ে গেল কিছুটা,তারপর চলে এলাম সবাই বাড়ি ।
এরপর কেটে গেছে এক এক করে অনেক বছর, কৈশোর পেরিয়ে,যৌবন তখন প্রায় অন্তিম লগ্নে করেছে পদার্পণ ।
আজ সব কিছু ভুলে বাস্তবের কঠিন সত্যর সম্মুখীন সবাই,
কাজ করে,হেঁটে চলেছি বড় রাস্তা দিয়ে,হঠা দেখি সামনে মাস্টার মশাই সামনে,ছুটে গিয়ে একটা প্রনাম করি।
কেমন আছেন মাস্টার মশাই ?
আমায় চিনতে পারেন ?
সত্তর অতিক্রান্ত সেই শুভ্র কেশ,পরনে খদ্দরের পাঞ্জাবি আর সাদা ধুতি পরিহিত মাস্টার মশাই গুরুগম্ভীর স্বরে বললেন তুই তো সঞ্জয় উবাচ, টেন সি ।
আমি সত্যি স্তম্ভিত আনন্দে গলা বদ্ধ, কত দিনের পরে ঠিক
বৃদ্ধের চোখে তখন আনন্দ অশ্রুধারা, তারপর কত প্রশ্ন তাঁর।
হা, মাস্টার মশাই আমি সেই যাকে পড়া না করায় ক্লাস থেকে বের করে দিয়ে ছিলেন । খুব রাগ হয়েছিল মনে । নতুন কৈশোর এর সূচনায় শরীরে বয়ে গিয়েছিল এক অপমানের ছোঁয়া, এসেছিল বিদ্রোহী ভাব ।
পরিচয় হয় অপমানের সঙ্গে কারন অন্য সবার হাসি, তাচ্ছিল্য,পরিহাস করেছিল আমায় হেয়।
খুব রেগে মন না চাওয়া বাজে কথা হয়েতো বলেছিলাম আপনার অগোচরে ।
তখন ছুটির ঘন্টা সবে পড়েছে, আমি তখনো কান দুখানি ধরে নীলডাউন।
হঠাৎ আপনি এসে আমার মাথায় হাত দিয়ে বলেছিলেন কষ্ট পেয়েছিস তো ?
দেখিস তোর এতে ভালো হবে কারণ তুই আর ভুল পথে যাবি না ।
হ্যাঁ, মাস্টার মশাই আমি আজ ঠিক মানুষ হয়েছি যেমনটি আপনি চেয়েছিলেন ,আপনার থেকে শিখেছি
"যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে "
আপনি আমাকে আপনার সেই যৌবনের সেরা সময় দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন এক নির্ভীক ভবিষ্যতের যুবককে ।
যে শুধু জানে "অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে"।
নতজানু হয়ে যখন আমি প্রনাম করতেই আমায় মাস্টার মশাই আবার বুকে টেনে নিলেন,সেদিনের সেই ভুল ঠান্ডা হলো তার শীতল পরশে।
শ্রী সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়
কলিকাতা
৯৮৩১৮৪০১৯৬
"স্যার -তোমায় প্রণাম "
উত্তরমুছুন_________________________________________________
পীযূষ কান্তি দাস
________________________________________________
জীবনের তরী আজ চলছে তরতরিয়ে ।চাকুরীরতা স্ত্রী -দুই ছেলে আর আমি ।নিজেও একটি স্বশাসিত কেদ্রীয় সরকারী সংস্থার মোটমুটি উচ্চপদস্থ কর্মচারী ,কোলকাতায় নিজস্ব বাড়ি -গাড়ি মোটকথা বেশ ভালোই আছি ।ছেলেরা ও পড়াশুনা ভালোই করে ।চিন্তা -ভাবনা বেশী নেই ।স্বচ্ছল স্বাভাবিক সুস্থ জীবন ।কিন্তু আজকের এই "আমি "কে "আমি" হয়ে উঠার জন্য যার অবদান সবচেয়ে বেশী -তাঁর কথাই আজ আপনাদের বলবো ।আমি কিন্তু তথাকথিত কোন লেখক ও নই যে আপনাদের পুরো মনঃসংযোগ ধরে রাখতে পারবো ,তবুও ক্ষমা -ঘেন্না করে যদি পুরোটা পড়েন তা হলে কৃতজ্ঞ থাকবো ॥
তখন পড়ি দশম শ্রেণীতে ।খুবই গরীব অর্থাত্ নূন আনতে পান্তা ফুরায় এমনই পরিবারে আমার জন্ম ।আমাদের মতো পরিবারে পড়াশুনাটা অনেকটাই সেই বিলাসিতার পর্যায়েই পড়ে ।ওই বয়সের ছেলেদের তখনই কোন না কোন কাজে জুতে দেওয়া হতো যাতে কিছু রোজগার করে নিজের পেট চালাতে পারে আর সাথে সাথে সংসারে ও দুটো পয়সা আমদানি হয় ।এত বাধা থাকা সত্বেও আমি কিন্তু পড়াশুনা ছাড়িনি ।ক্লাসে প্রতি বছর প্রথম হতাম বলে স্কুলে বেতন লাগতো না ।বইখাতা ও কিছু কিছু স্কুলের থেকেই পেতাম ।এভাবেই চলছিলো পড়াশুনা ।।
দশম শ্রেণীতে উঠার পর বুঝতে পারলাম পড়াশুনা ঠিক্ মতো এগুচ্ছে না ।কারণ তখন এখনকার মতো না হলেও টিউশন কালচারটা অল্প অল্প করে পাখা মেলা শুরু করে দিয়াছিল ।স্কুলে আবার অংক আর ইংরাজী শিক্ষক রিটেয়ার্ড করে গেছেন এবং সরকার বাহাদুরের বদান্যতায় নূতন শিক্ষক নিয়োগ হয়ে উঠেনি ।আমি তো অকূল -পাথারে -হাবুডুবু অবস্থায় ।বুঝতে পারছি যে টেনে কষে কোন রকম পাশ হয়তো বা হবো কিন্তু ভালো রেজাল্ট অসম্ভব ।শুধুই ভাবি -উপায় কিছুই নেই কারণ বাড়ির যা অবস্থা টিউশন এর টাকার কথা বললেই পড়াশুনার ইতি -এটা 100%গ্যারেন্টেড ।বন্ধুরা সব দনিপুর হাটের কাছে (মেদিনীপুর জেলার একটা প্রত্যন্ত গাঁয়ের হাট )অসিত বাবু যিনি অন্য একটি স্কুলের শিক্ষক এবং ইংরাজী ও অংকের পড়ান তাঁর কাছে পড়ে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে ।আমি বই খাতা যেটুকু আছে তাই নিয়ে বসি আর ভাবি শুধু ভাবি ।আলোর কোন দিশা পাইনে ॥
দেখতে দেখতে টেষ্ট পরীক্ষার সময় ও এগিয়ে আসছে ।চোখে জল আসে পড়তে বসলে ,এমনই দিনে হঠাত্ সহপাঠি বন্ধু রবীন্দ্রনাথ বেরা যাকে আমরা ভোলা বলেই ডাকি সে দুপুরে টিফিন পিরিয়ডে বলল --এই পীযূষ এদিকে আয় ।
---কেন রে -
---আয় না ,কথা আছে ।
---কি কথা ?
----এদিকে আয় -বলছি !
অগত্যা গেলাম তার কাছে ভয়ে ভয়ে ।কারণ ওর কাছ থেকে দু -তিনটা বই নিয়ে রেখেছি -যদি ফেরত্ চায় তো আমি গেছি !
--তুই আজ ছুটির পর আমার সাথে দনিপুর হাটে যাবি ।
----কেনো ?
----দরকার আছে ।
----কি দরকার ?
----অত জেনে কাজ নেই ব্যস ।আমি বলেছি তুই যাবি ।
যথারীতি বিকেল চারটায় ছুটি হলো ।ভোলার সাথে দনিপুর হাটে গেলাম ।ও আমায় বললো --চল অসিত বাবুর সাথে দেখা করে আসি ।
----না ।আমি যাবো না ,তুই যা ।
আসলে ভয় পাচ্ছি স্যার যদি পড়াশুনার কথা জিগ্গেস করেন ,কি উত্তর দেবো ?
----চল ।
----আমি যাবো না তো বলছি তোকে ।তুইতো জানিস স্যার এর কাছে গেলেই স্যার পড়ার কথা জিগ্গেস করবেন আর সব ছেলে মেয়ের সামনে আমায় অপ্রস্তুত হতে হবে ।
----ধুস পাগলা ,স্যারই তো তোকে ডেকেছেন ।
-----কেনো ?
----জানি না ।সেটা স্যারই জানেন ।
অগত্যা যেতেই হলো স্যার এর কাছে ।স্যার অবশ্য আমায় চিনতেন ।গিয়েই প্রণাম করলাম ।
---পড়াশুনা কেমন চলছে ?
মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রই ।উত্তর তো দেওয়ার কিছুই নেই ।
----কি হল বলো ?
তখন ও মাথা নীচুই করে আছি ।চোখ দিয়ে বুকের ব্যথারা যেন নদী হয়ে বেরিয়ে আসতে চায় ।চুপ করে দাঁড়িয়ে রই ।
---বুঝেছি ।কাল থেকে তুমি রবিদের সাথে পড়তে আসবে ।
-----স্যার !টিউশন এর টাকা দেওয়ার মতো কোন উপায়ই নেই আমার ।
----একটি চড়ে তোমার মুন্ডু ঘুরিয়ে দেবো ।আমি কি তোমায় টাকার কথা বলেছি ?তোমার বাড়ির অবস্থা কি আমার অজানা ?রবি আমায় সব বলেছে ।
এতক্ষণ চেপে রাখা কান্নার বেগ আর সামলে রাখা গেল না ।দুকূল ছাপানো বন্যার মতো আমার দু -গাল বেয়ে ঝর ঝর করে অঝোর ধারায় ঝরে পড়লে ।।
তারপর সেই আমি মাধ্যমিকে বিশাল রেজাল্ট করলাম আর তারপর পড়াশুনা নিয়ে আর কোন বেগ পেতে হলো না ।পড়াশুনা শেষ করে চাকুরীতে ঢুকলাম ।প্রতিষ্ঠা লাভ করেছি ।আজো মেদিনীপুরে দেশের বাড়ি গেলে দনিপুর হাটে যাই ।স্যার অনেক দিন হলো অবসর নিয়েছেন ।ওই অঞ্চলের দরিদ্র ছেলে মেয়েদের কথা ভেবে পাঠ্যপুস্তকের একটি লাইব্রেরি করেছেন ।ওখানেই থাকেন বেশির ভাগসময় ।দেখা করার সময় এখনো স্যারের প্রিয় দুটো জর্দা পান নিয়ে যাই ।প্রণাম করি ।প্রতি বারেই প্রণাম করার সময় আজো চোখে জল আসে ।ভগবানের কাছে আকুল হয় প্রার্থণা করি --"ভগবান আমার স্যার কে দীর্ঘজীবী করুন !এরকম স