মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

“অগ্নি কবি শুধু দ্রোহের কবি নন তিনি প্রেমের কবি” - সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়















“অগ্নি কবি শুধু দ্রোহের কবি নন তিনি প্রেমের কবি”

সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়


কাজী নজরুল ইসলাম জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ ভাদ্র থকে ১২, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দে তার সময় কালে কেবল বিদ্রোহ কবি হিসাবে আখ্যায়িত করলেও তার রচিত গান ও কবিতায় প্রেম বিষয়ে তাঁর কালজয়ী প্রতিভার কথা না বলা হলে অনেকটাই  অপূর্ণ থেকে যায়।  তিনি সাম্যবাদী, অসাম্প্রদায়িক কবি, একইসঙ্গে বিদ্রোহী ও প্রেমিক কবি, গীতিকার, সঙ্গীত রচয়িতা ।

তিনি  তাঁর একটি বিদ্রোহ কবিতায় বলেছেন  ‘‘মম এক হাতে-বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণ-তূর্য.... এই লেখা থেকে বোঝা যায় তিনি যেমন একদিকে  রণ-তূর্য বাদক আর অন্যদিকে প্রেম, প্রেয়সী।কাজী নজরুল ইসলাম কেবলমাত্র বিদ্রোহী বা দ্রোহের কবিই নন।, তিনি তাঁর গানে প্রেম ও বিরহ এক অসামান্য রুপ দান করে গিয়েছেন । তাঁর অন্তরে ছিল বিদ্রোহী সত্তা ও প্রেমিক সত্তার সমন্বয়। তাঁর রচনায় তাঁর প্রেমের নিবেদনে দেখা গিয়েছিল নারীর প্রতি, স্রষ্টার প্রতি, প্রকৃতি প্রতি, স্বাধীনতা ও দেশের প্রতি । সর্বোপরি মানুষের প্রতি প্রেম তাঁর হৃদয়ের ভিতর হতে ছাপ পাওয়া যায়। উদাহরন স্বরূপ  ‘মোর প্রিয়া হবে, এসো রাণী, দেব খোঁপায় তারার ফুল’গানটি যে কতটা রোমান্টিক বা কতটা গভীর তা প্রকৃত প্রেমিক অনুধাবন করতে পারবেন ।

প্রেমের গানে কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন অসাধারণ।  তাঁর গানে ছিল আবেগ-বৈচিত্র্য, লোক আঙ্গিক, গজল ও উচ্চাঙ্গ  সঙ্গীতের এবং কীর্তন আঙ্গিকের প্রভাব।তাঁর রচনায় শব্দ নির্বাচনে, গজলে আরবি, ফার্সি ও উর্দু শব্দের ব্যবহার কীর্তন আঙ্গিকের গানে সংস্কৃত শব্দ পেয়েছিলো প্রাধান্য। রাগরূপের সঙ্গে নজরুলের পরিচয় গভীর। এটি বোঝা যায় তার সৃষ্ট নতুন সুরের নামকরন দেখে যেমন- নির্ঝরিণী, সন্ধ্যামালতী, বনকুন্তলা, দোলন চাঁপা, মীনাক্ষী, বেনুশ।

 কবির জীবনে প্রেম এসেছে বহুবার, তাই তার বহু প্রেমের গানে বিরহের সুর লক্ষ্য করা গিয়েছিলো। প্রথম স্ত্রী নার্গিসের সঙ্গে বিচ্ছেদের নার্গিসের চিঠির উত্তরে লেখেন যে গান, সেটা এই সময়ের যেন সকল হৃদয়ের বিরহ ব্যাথা-‘যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই, কেন মনে রাখ তারে, ভুলে যাও তারে ভুলে যাও, একেবারে।’

প্রেমিক নজরুলের আসল পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর রচিত গানগুলিতে৷ প্রেম-বিরহ, ব্যর্থতা, আশা, নিরাশা নিয়ে তার লেখায় নজরুলের কোনো জুড়ি ছিল না৷ তাঁর প্রেম বিষয়ক লেখা সংগীতের কথা ও সুর এককথায় মানুষের মনের অন্তরে মিশে যাওয়া চেতনায় পরিপূর্ণ ৷ নজরুল নানা প্রায় তিন হাজারেরও বেশি গান রচনা করেছেন। পৃথিবীর কোনো ভাষায় একক হাতে এত বেশি সংখ্যক গান রচনার উদাহরণ নেই, তাঁর নিজের লেখা গানগুলোর  বড় একটি অংশই তাঁরই সুরারোপিত। এই গানগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রেম, ভক্তি, প্রকৃতি নিয়ে বন্দনা এছাড়া দেশাত্মবোধক গান। তার গানে রয়েছে রাগপ্রধান বৈশিষ্ট পরিলক্ষিত হয়েছে  এছাড়া তিনি হাসির গান, ব্যঙ্গাত্মক গান, সমবেত সংগীত, রণ সংগীত ইত্যাদি রচনা করেছেন ।

সঙ্গীতে প্রেমের স্মৃতিচারণও করতেন নজরুল- ‘মনে পড়ে আজ সে কোন জনমে বিদায় সন্ধ্যা বেলা, আমি দাঁড়ায়ে রহিনু এপারে, তুমি ওপারে ভাসালে ভেলা। নজরুল ঐতিহাসিক প্রেমের গানেও তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। যেমন- লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদ, শাহাজাহান-মমতাজ, সেলিম-নুরজাহানকে নিয়ে লেখা গান।
কাজী নজরুলের অসংখ্য প্রেমের গান দিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি সাম্যবাদী হলেও প্রেমের কোমল রূপও তার মধ্যে বিদ্যমান ছিল তাই তিনি দ্রোহের কবির সাথে প্রেমের কবি।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সাম্প্রতিক লেখা কবিতা

ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি / রঙ্গনা পাল /পর্ব-৪০

ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি/ রঙ্গনা পাল / পর্ব-৪০         অতীত হোক বা বর্তমান নারী চিরকাল পুরুষের ভালোবাসায় বশ। হ্যাঁ কেউ কেউ কখনও কখনও ছলনা করে ...